Veteran photographer Ansel Adams about our vulnerable environment
Veteran photographer Ansel Adams about our vulnerable environment

পরিবেশের সার্বিক সুরক্ষা ও ভারসাম্য রক্ষায় প্রতিটি মানুষের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তবে মূল দায়িত্ব রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট দপ্তর এবং আইন ও বিচার বিভাগের।

গত কয়েক যুগে বাংলাদেশে সরকারি-বেসরকারি নানা ধরণের উন্নয়ন কর্মকান্ডের কারনে অনেক কৃষি জমি, নদী-খাল-জলা, পাহাড়ি এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর পরেও এসব কার্যক্রম থেমে নেই। সব সরকারই সবার আগে অর্থনৈতিক উন্নয়নকে প্রাধান্য দিয়েছে এবং দিচ্ছে। সেখানে পরিবেশ-প্রতিবেশের দূষণ ঠেকানো এতি নগন্য একটি বিষয়।

আইন অনুযায়ি পরিবেশ অধিদপ্তরের কাজ হলো কোন স্থাপনা তৈরির আগে প্রস্তাবিত জায়গাটি পর্যবেক্ষন করে মতামত দেয়া। আর অনুমোদন দিলেও বিভিন্ন আইনী শর্ত আরোপ করে এবং পরবর্তীতে ঘটনাস্থল পরিদর্শনের মাধ্যমে পরিবেশের সুরক্ষা নিশ্চিত করা। আর আইনের বরখেলাপের প্রমান পেলে তাদের দায়িত্ব হলো সেইসব স্থাপনার কাজ বন্ধ করা এবং দোষীদের বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ নেয়া।

কিন্তু বাস্তবতা হলো এই যে, সরকারি কর্মকর্তারা খুব কম ক্ষেত্রেই তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করেন। ঘুষ-দুর্নীতি-অনিয়মের কারনে পরিবেশ অধিদপ্তর তার গ্রহনযোগ্যতা ও কার্যকারিতা হারিয়েছে।

অনুমোদন প্রক্রিয়া, শর্তারোপ ও আইনী ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে দেখা যায় পক্ষপাতিত্ব আর টাকার খেলা।

ফলে শেষ ভরসা হিসেবে পরিবেশ কর্মীরা আদালতের দ্বারস্থ হন।

কিন্তু সাম্প্রতিককালে সরকারি ও বেসরকারি খাতে নেয়া কয়েকটি মেগা প্রকল্প অনুমোদনের প্রক্রিয়ায় স্পষ্টতঃ অনিয়মের অভিযোগে করা রিট পিটিশনগুলো আদালত কর্তৃক বাতিল হয়। এর ফলে একটা বিষয় স্পষ্ট যে, বেসরকারি বড় বিনিয়োগকারী ও সরকারের বড় প্রকল্পের বিরুদ্ধে কাউকে প্রতিবাদ, বিক্ষোভ করতে দেয়া হবেনা এবং এইসব প্রকল্প চলবেই।

উদাহরণ হিসেবে সুন্দরবনের পাশে সরকারি রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্র ও বেসরকারি ওরিয়ন গ্রুপের বিদ্যুত কেন্দ্র, রূপপুরের পারমানবিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মান প্রকল্পসমূহ এবং বিটি বেগুন অন্যতম। এসব প্রকল্পে আইন ভঙ্গ, শর্ত ভঙ্গ হয়েছে, এমনকি স্বাস্থ্যগত ও পরিবেশগত প্রভাব নিরূপন না করেই শুরু করে দেয়া হয়েছে বহুল আলোচিত জিএম শস্য।

কিন্তু আদালত সরকারকে যথাযথ নির্দেশনা না দিয়ে বরং পিটিশনগুলো খারিজ করে দেওয়ায় হতাশাগ্রস্ত হয়েছে পরিবেশবান্ধব মানুষগুলো যারা “ভাষাহীন গাছপালা, নদী-নালা, পশু-পাখির” পক্ষে কাজ করে।

আন্তর্জাতিক পরিবেশ আদালতের বিষয়টি বেশ কয়েক বছর জুড়েই সারা বিশ্বে আলোচিত হচ্ছে। এমনকি জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সম্মেলনেও কথা হয়েছে। কিন্তু বিষয়টি অপেক্ষাকৃত জটিল ও স্পর্শকাতর হওয়ায় এখনো কোন সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি জাতিসংঘ।

এদিকে যত দিন যাচ্ছে ব্যবসায়ি, ভূমি দস্যু ও নদী-জলা ভরাটকারীদের দৌরাত্ম্য বাড়ছেই। এর জন্যে বাহবা পাবে আমাদের দুর্নীতিগ্রস্ত ও নীতিহীন সরকারি আমলা ও আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা।

২০১৩ সালের জলবায়ু সম্মেলনে যোগ দেওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার। দেখেছি এইরকম একটি বিশাল সম্মেলনেও কয়েকটি উন্নত দেশ কিভাবে ছড়ি ঘুরায়। সারা সপ্তাহজুড়ে আলোচনা যাই হোক শেষ পর্যন্ত নিজেদের সিদ্ধান্তকেই আইনে পরিণত করে তারা।

সেখানে এক সংবাদ সম্মেলনে UNFCCC প্রধান ক্রিস্টিয়ানা ফিগুয়েরেসকে জিজ্ঞেস করেছিলাম আন্তর্জাতিক পরিবেশ আদালত বলে কিছু আছে কিনা। কারন আমাদের দেশে জনমত উপেক্ষা করে, সুন্দরবনের পশু-পাখি আর নদীর উপর ক্ষতিকর প্রভাব জেনেও ১৩২০ মেগাওয়াটের একটি বিদ্যুত কেন্দ্র বানাচ্ছে বাংলাদেশ ও ভারতের সরকার। আদালতে কমপক্ষে তিনটি রিট পিটিশন দাখিল করা হলেও সেগুলো আমলে নেয়নি বিচারপতিরা। অপর দিকে একটি পিটিশনের বিপরীতে আদালত প্রকল্পের কাজে স্থিতাবস্থা জারি করলেও জমি অধিগ্রহণ থেমে থাকেনি।

আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম এই অবস্থায় আমরা পরিবেশকর্মীরা কি করতে পারি।

ক্রিস্টিয়ানার উত্তর ছিল খুব সাবধানী। না এমন কোন আদালত নেই। প্রতিটি দেশই সার্বভৌম। তারা তাদের পরিকল্পনা ও সুবিধামত নানা প্রকল্প গ্রহণ করে। তার মতে প্রতিটি দেশেরই উচিত হবে সুলভ, নির্ভরযোগ্য ও পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি গ্রহণ করা।

আন্তর্জাতিক আদালত প্রতিষ্ঠা হলে তা হবে পরিবেশ রক্ষায় এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। আসন্ন প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনে এই বিষয়টি সামনে আনা জরুরি।

এই দাবীর সাথে একমত হলে এই পিটিশনটিতে সাইন করুন এবং সবার মাঝে ছড়িয়ে দিন।

আরো জানতে পড়ুনঃ