This slideshow requires JavaScript.

বিএনপি’র মহারাজা খালেদা জিয়ার মুহুর্মুহু গর্জনে বিরক্ত হইয়া সরকার আবার তাহাকে সরাসরি কথা বলিতে অনুরোধ করিলো। তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু সরকারের পক্ষে প্রেস কনফারেন্স করে মঙ্গলবার খালেদাকে বললেন তার মতে যারা প্রকৃত যুদ্ধাপরাধী তাদের একটি তালিকা দিতে। [‘খালেদার নাস্তিকতা’ প্রসঙ্গে কিছু বলার রুচি আমার নাই]

তার আগের দিন ও এরও আগে অনেকবার খালেদা ‘নির্বাচনী জনসভা’র স্টাইলে বলেছেনঃ “ক্ষমতায় গেলে সব প্রকৃত মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচার করা হবে”।

যদিও তিনি তিনবার ক্ষমতায় ছিলেন, সেই কাজ করিতে তিনি পারেন নাই, কোথায় যেন তার আটকায়। দালাল আইন বাতিল করে ১১,০০০ রাজাকারের বিচারটা কে যেন বন্ধ করেছিল!!! 😉

যাকগা, এর চেয়ে ভালো তিনি আর কি বলতে পারেন? তার দল ও বন্ধুপ্রতীম জামায়াতে ইসলামির মতে রাজাকার বলতে আওয়ামীলীগের উঁচু পর্যায়ের কিছু নেতা ও তাদের আত্মীয়দের মধ্যে থাকা কিছু ব্যক্তির নাম উঠে আসে। আর যুদ্ধাপরাধী বলতে সিমলা চুক্তির মাধ্যমে পাকিস্তানের কাছে হস্তান্তর করা ১৯৫জন যুদ্ধবন্দী সেনা কর্মকর্তার কথা বুঝায় বিএনপি-জামায়াত। জামায়াতের মূল নেতাদের দাবি তারা পাকিস্তানের সমর্থন করেছিল, কিন্তু গনহত্যা-খুন-ধর্ষন-লুট-অগ্নিসংযোগে অংশ নেয়নি!!!

আওয়ামীলীগের পাঁচটি নাম খুব বেশী শোনা যায়, যদিও এখন পর্যন্ত প্রমানসহ কোন বিএনপি বা জামায়াতি নেতা এদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ উপস্থাপন করেননি।

  • প্রধানমন্ত্রীর বেয়াই শ্রমমন্ত্রীর পিতা নুরু মিয়া (ফরিদপুর, স্থানীয় শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন),
  • মহিউদ্দীন খান আলমগীর (উপসচিব ছিলেন)
  • শেখ সেলিমের বেয়াই মুসা বিন শমসের,
  • হাকিম হাফেজ আজিজুল ইসলাম (ঢাকা, নেজামে ইসলাম পার্টির কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক, আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামের বড় ভাই),
  • আশিকুর রহমান (মুক্তিযুদ্ধের সময় টাঙ্গাইলের এডিসি ছিলেন যারা রাজাকার, শান্তিবাহিনী নিয়োগ দিত। আওয়ামী লীগের বর্তমান কোষাধ্যক্ষ)।

প্রথম ব্যক্তির বিষয়ে তার পুত্রের কাছে একটা বক্তব্য আশা করেছিলাম। তিনি কেন বেহায়ার মত এখনও চুপ আছেন বা তার কাছের কেউ কেন কথা বলছে না সেটা খুবই আশ্চর্যজনক। যতটুকু শুনেছি তথ্যটি সত্য, তথাপি ইঞ্জিনিয়র মোশাররফ সাহেব তাহার মন্ত্রীত্ব বা রাজনীতি ছাড়েন নাই।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সম্প্রতি কয়েকটি টিভিতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সময়কার তার ভূমিকা নিয়ে বলেছেন। সমস্যা হলো উনার ভূমিকা নিয়ে কথা তুলেছেন কাদের সিদ্দীকী, যিনি কয়েক বছর আগে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত হয়ে পাগলদশায় ভুগছেন। তার সবাই বিশ্বাস করছে না কথাটা, আবার মহিউদ্দীন সাহেব আরো কিছু কারনে বিতর্কিত ব্যক্তি হওয়ায় তার কথাও বিশ্বাস করা যাচ্ছেনা। ভালো হতো সেসময়কার কয়েকজন সহকর্মী যদি এখন মুখ খুলতেন। চ্যানেল আইয়ের তৃতীয়মাত্রায় তার বক্তব্য শুনুন।

শেখ সেলিম সাহেব অনেক দাপুটে মানুষ, তাই হয়তো পাত্তাই দিচ্ছেননা বিরোধী দল কি বলতে চাইছে আর জনগন কি ভাবছে তার ও তার বেয়াই সম্পর্কে।

আইন প্রতিমন্ত্রী বা তার ছোট ভাই মোরশেদুল ইসলাম তাদের বড় ভাইয়ের বিষয়ে খোলামেলা কথা বলছেন না। যতদূর মনে পড়ে বিখ্যাত চলচ্চিত্রকার মোরশেদুল ইসলাম গত বছর হয়তো প্রত্যাখ্যান করে কিছু বলেছিলেন।

আশিকুর রহমান এমপি সাহেবও আজকাল নীরব, অনেকদিন আগে থেকেই। এটা বোকামী ও তার এ আচরন রহস্যজনক।

তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু সাম্প্রতিক কয়েকটি বক্তব্যে বলেছেন সব দলের যুদ্ধাপরাধীদেরই বিচার হবে, তবে সবার আগে মূল হোতাদের বিচার হতে হবে। আমি উনার বক্তব্যের সাথে পুরোপুরি একমত।

মনে রাখতে হবে দুইটি ট্রাইব্যুনালে বর্তমানে ৬০০জনের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত হচ্ছে। আরো কয়েক হাজার অভিযোগ হাতে আছে। আর কয়েকটি মামলায় বিচার চলছে জামায়াত-বিএনপি ও একজন আওয়ামীলীগের নেতার বিরুদ্ধে।

বিএনপি ও জামায়াত অবশ্য মূল যুদ্ধাপরাধী হিসেবে আটক ১৯৫জন পাকিস্তানী সেনা কর্মকর্তার কথাই মনে করিয়ে দেয় যাদেরকে ১৯৭৪ সালের ২২শে এপ্রিল সম্পাদিত ত্রি-পক্ষীয় সিমলা চুক্তির মাধ্যমে পাকিস্তানের হাতে তুলে দেয়া হয়। বিনিময়ে বাংলাদেশে ফেরত আসেন প্রায় ২লাখ সামরিক-বেসামরিক-পেশাজীবী। কথা ছিল পাকিস্তান তাদের কর্মকর্তাদের বিচার করবে, কিন্তু তারা সেই কাজ এখনও করেনি।

আর যেহেতু সেই চুক্তিটির কোন আইনি ভিত্তি নেই, তাই বাংলাদেশ সরকার চাইলে এখন এই বিচার করতে পারে। এবং খুব স্বাভাবিকভাবেই বিএনপি ও তার জোট এদের বিচার করবে না, করেও নি। এদের বিচার যে করা যাবে তা ট্রাইব্যুনাল সম্প্রতি দেয়া তিনটি রায়েই উল্লেখ করেছে।

কিন্তু ধীরে, আগে নাটের গুরু ও তাদের মূল সহচরদের বিচারটা শেষ করেন। তারপর জামায়াত-বিএনপি ছাড়াও অন্যান্য দলে ঘাপটি মেরে থাকা বড় শান্তি কমিটি সদস্য, রাজাকার, আল-বদর, আল-শামসদের বিচার করেন।

অতঃপর আমি চিৎকার করিয়া বলিবঃ “একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ সমাপ্ত হইলো! বাংলাদেশ স্বাধীন হইলো!! জয় বাংলা!!!”