quader mollaজামায়াত-শিবির-বিএনপি জোট যত যাই বলুক, আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসি চাই! ফাঁসি চাই!! ফাঁসি চাই!!!

তথাকথিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের নামে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে গঠিত ট্রাইব্যুনাল সরকার নির্দেশিত ছকে আগামীকাল আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে রায় প্রদান করে সরকার ঘোষিত শাস্ত্মি দেয়ার সিদ্ধান্ত্ম বাস্ত্মবায়নের ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে আগামীকাল মঙ্গলবার দেশব্যপী সকাল-সন্ধা হরতাল কর্মসূচী ঘোষণা করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারী জেনারেল জনাব মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান নিম্নোক্ত বিবৃতি প্রদান করেছেন :-
\\”আমরা বারবার বলে আসছি সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে জামায়াত নেতৃবৃন্দকে শাস্ত্মি প্রদানের জন্য ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছে। দেশী-বিদেশী আইনবিদ, মানবাধিকার সংস্থাসহ আন্ত্মর্জাতিক সম্প্রদায় বিচারের চলমান প্রক্রিয়াকে প্রত্যাখান করেছে। তারা বারবার বলেছে এটি একটি ভ্রান্ত্ম প্রক্রিয়া। দি হিউম্যান রাইটস্‌ ওয়াচ, এমনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রম্নপ সকলেই এই বিচার প্রক্রিয়ার বিরম্নদ্ধে বক্তব্য দিয়েছেন। বিশ্ব জনমতকে উপেÿা করে সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বাস্ত্মবায়নের জন্য এই বিচার কার্য পরিচালনা করছে।
সরকারের মন্ত্রী-এমপি ও সরকার দলীয় নেতৃবৃন্দ বারবার ঘোষণা দিচ্ছেন জামায়াত নেতাদের ফাঁসি দেয়া হবে এবং সরকারের চলতি মেয়াদেই তা কার্যকর করা হবে। স্বরাষ্টমন্ত্রী মিশরে গিয়ে বলেছেন, এই সপ্তাহে যুদ্ধাপরাধের দ্বিতীয় রায় ও ১৪ই ফেব্রম্নয়ারী তৃতীয় রায় ঘোষণা করা হবে। ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক ঘোষিত আব্দুল কাদের মোলস্নার রায় আগামীকাল নির্ধারিত হওয়ায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ঘোষণার সত্যতা প্রমানিত হয়েছে এবং সরকারের ইচ্ছা অনুযায়ী এ রায় প্রদান করা হচ্ছে বলে জনগণের কাছে সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়েছে। এর আগে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন জামায়াত নেতাদের ফাঁসি দেয়া হবে। বেশ কিছুদিন পূর্বে আওয়ামী লীগের জনৈক নেতা সমাবেশে বলেছেন, \\’জমায়াত নেতাদের ফাঁসি, দড়ি দিয়ে ঝুলিয়ে কার্যকর করা হবে।\\’ সবশেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিচারের সুনির্দিষ্ট দিন ও তারিখ নির্ধারণ করেছেন। রায়ের জন্য সময় নির্ধারনের দায়িত্ব আদালতের। কিন্তু সরকার যখন ফাঁসির কথা বলেন ও রায়ের দিন তারিখ সম্পর্কে সুস্পষ্ট বক্তব্য দেন, তখন জনগনের বুঝতে আর কষ্ট হয় না যে সরকারের নীল নকশা অনুযায়ী বিচারকার্য সম্পন্ন হচ্ছে এবং এই বিচারে সরকারের প্রতিহিংসারই প্রতিফলন ঘটবে।
দেশের মানুষ প্রহসনের বিচারের নামে কোন রাজনৈতিক হত্যা নিরব দর্শকের মত অবলোকন করতে পারে না। অন্যায়ভাবে এক ব্যক্তিকে হত্যা করা গোটা জাতিকে হত্যা করার নামান্ত্মর। বিচারের নামে যখন রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বাস্ত্মবায়নের জন্য প্রকাশ্যভাবে অবিচার করা হয় এবং জনগনের সামনে তা দৃশ্যমান হয়, তখন জনগন চুপ করে বসে থাকতে পারেনা।
আমরা স্পষ্ট বলে দিতে চাই সরকারী পরিকল্পনায় বিচারের নামে এই রাজনৈতিক প্রতিহিংসার চক্রান্ত্ম দেশবাসী প্রতিহত করবে। এসএসসি পরীÿা চলমান থাকা অবস্থায়ও সরকারের নীল নকশার ষড়যন্ত্র ও বিচারের নামে অবিচারের বিরম্নদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য আগামীকাল মঙ্গলবার দেশব্যাপী সকাল-সন্ধা হরতাল কর্মসূচী ঘোষণা করছি।
বিতর্কিত রাজনৈতিক ট্রাইব্যুনালের ঘোষিত রায়ে যদি সরকারের নীল নকশার শাস্ত্মি বিধানের কোন প্রতিফলন ঘটে, তাহলে আগামী কালের হরতাল বর্ধিত হয়ে পরদিন ৬ই ফেব্রম্নয়ারী বুধবার থেকে লাগাতারভাবে হরতাল কর্মসূচী অব্যাহত থাকবে। আমরা স্পষ্ট বলে দিতে চাই সরকারের প্রতিহিংসার রায় জনগন বুকের তপ্ত খুন ঢেলে দিয়ে প্রতিহত করবে।
আমরা সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবি, আইনজীবি, রাজনীতিবীদ, অর্থনীতিবীদ ও সুশীল সমাজসহ দেশের সর্বস্ত্মরের মানুষকে বিচারের নামে অবিচারের বিরম্নদ্ধে আহুত এই হরতাল কর্মসূচী বাস্ত্মবায়নে সহযোগিতা এবং জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের সকল জনশক্তিকে জনগনকে সাথে নিয়ে এই কর্মসূচী বাস্ত্মবায়নে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহবান জানাচ্ছি।”
বিঃ দ্রঃ সংবাদপত্রের গাড়ী, সাংবাদিক, এ্যাম্বুলেন্স, জরম্নরী ঔষধ সরবরাহের কাজে নিয়োজিত গাড়ী এই হরতালের আওতামুক্ত থাকবে। — জামায়াত ওয়েবসাইট।

ঢাকায় এক সমাবেশে শিবিরের কেন্দ্রীয় সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক ইয়াসিন আরাফাত বলেছেন, “শিবিরের শরীরে এক বিন্দু রক্ত থাকা পর্য‌ন্ত বাংলার মাটিতে সাঈদীর অবৈধ কোনো রায় মেনে নেবে না। অবিলম্বে এ ট্রাইব্যুনাল ভেঙে দিয়ে সাঈদীকে মুক্তি দিতে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান তিনি।

তিনি বলেন, “ছাত্রশিবির গ্রেনেড, বুলেট, টিয়ারশেলকে ভয় পায় ‍না।” — বাংলানিউজ২৪ডটকম

সোমবার বিকেলে নগরীর লালদিঘী চত্বরে জেলা পরিষদ মার্কেটের সামনে আয়োজিত এক সমাবেশে চট্টগ্রামের জামায়াতের কয়েকজন নেতা সরাসরি ট্রাইব্যুনালকে `অবৈধ` বলে উল্লেখ করেন। একজন বক্তা অবৈধ বলে আবার ভুল স্বীকার করেন। শুধুমাত্র একজন বক্তা সভার সভাপতি এবং নগর জামায়াতের আমির ও সাংসদ আ ন ম শামসুল ইসলাম সেটিকে `অবৈধ` না বলে `খুব বৈধ` বলে উল্লেখ করেন।— বাংলানিউজ২৪ডটকম

একাত্তরে ধুন, ধর্ষণ লুটপাটের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার প্রথম রায়ে গত ২১ জানুয়ারি জামায়াতের সাবেক রুকন আবুল কালাম আযাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসির আদেশ দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

একই ধরনের অভিযোগে জামায়াতের সাবেক আমীর গোলাম আযম, বর্তমান আমীর মতিউর রহমান নিজামীসহ শীর্ষ সাত নেতা ও বিএনপির দুই জনের বিচার চলছে ট্রাইব্যুনালে।

মুক্তিযুদ্ধকালে মোস্তফা নামের এক ব্যক্তিকে হত্যার অভিযোগে ২০০৭ সালের ১৭ ডিসেম্বর কাদের মোল্লাসহ কয়েকজন জামায়াত নেতার বিরুদ্ধে কেরানীগঞ্জ থানায় একটি মামলা হয়। এছাড়া ২০০৮ সালে পল্লবী থানায় আরো একটি মামলা হয় কাদেরের বিরুদ্ধে। এ মামলাতেই ২০১০ সালের ১৩ জুলাই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এদিকে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বাতিলে জামায়াতে ইসলামীর দাবির সঙ্গে বিএনপি ‘একমত নয়’ বলে জানিয়েছেন দলটির এক জ্যেষ্ঠ নেতা। তরিকুল ইসলাম সোমবার এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, “আমি স্পষ্টভাষায় বলতে চাই- আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল বাতিল ও যুদ্ধাপরাধীর বিচার বন্ধে জামায়াতের দাবির সঙ্গে আমাদের আদর্শিক সর্ম্পক নেই। আমরা ওই দাবির সঙ্গে একমত নই। একমত হওয়ার প্রশ্নই উঠে না।”

তবে বর্তমানে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচার ‘স্বচ্ছ হচ্ছে না’ বলেই মনে করে বিএনপি।–বিডিনিউজ২৪ডটকম

প্রথম আলোর সুবাদে প্রাপ্ত তথ্য

ফিরে দেখা

কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্ত শুরু হয় ২০১০ সালের ২১ জুলাই। একই বছরের ২ আগস্ট কাদের মোল্লাকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ২০১১ সালের ৩১ অক্টোবর তদন্ত শেষ হয়। ওই বছরের ১৮ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আনে।
এরপর ২০১২ সালের ২৮ মে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে কাদের মোল্লার আনুষ্ঠানিক বিচারকাজ শুরু করেন ট্রাইব্যুনাল। এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ গত বছরের ১৭ থেকে ২৭ ডিসেম্বর মোট পাঁচ দিন যুক্তি উপস্থাপন করেন। পরে ৭ জানুয়ারি আসামিপক্ষ যুক্তি উপস্থাপন শুরু করে মোট আট দিনে তা শেষ করে।
কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে মামলাটি প্রথমে ট্রাইব্যুনাল-১-এ বিচারাধীন ছিল। গত বছরের ১৬ এপ্রিল এ মামলা ট্রাইব্যুনাল-২-এ স্থানান্তর করা হলে নতুন করে অভিযোগের বিষয়ে শুনানি হয়।
অভিযোগ গঠনের আদেশে কাদের মোল্লার পরিচিতিতে বলা হয়, ১৯৪৮ সালে ফরিদপুরের আমিরাবাদ গ্রামে কাদের মোল্লা জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৬ সালে ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজে শিক্ষার্থী থাকা অবস্থায় তিনি ছাত্রসংঘে যোগ দেন। একাত্তরে তিনি ছাত্রসংঘের সদস্যদের দিয়ে আলবদর বাহিনী গড়ে তোলেন।

কাদেরের বিরুদ্ধে ছয় অভিযোগ
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে মিরপুরের আলোকদি গ্রামে ৩৪৪ জন এবং কবি মেহেরুননিসাকে হত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের ছয়টি অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।
প্রথম অভিযোগে বলা হয়, কাদের মোল্লার নির্দেশে স্বাধীনতাবিরোধীদের হাতে আটক মিরপুর বাঙলা কলেজের ছাত্র পল্লবকে একাত্তরের ৫ এপ্রিল গুলি করে হত্যা করা হয়।
দ্বিতীয় অভিযোগে বলা হয়, একাত্তরের ২৭ মার্চ কাদের মোল্লা তাঁর সহযোগীদের নিয়ে কবি মেহেরুননিসা, তাঁর মা ও দুই ভাইকে মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনের বাসায় গিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করেন।তৃতীয় অভিযোগ অনুযায়ী, ২৯ মার্চ বিকেলে আরামবাগ থেকে সাংবাদিক খন্দকার আবু তালেব মিরপুর ১০ নম্বর সেকশনের বাসস্ট্যান্ডে গেলে কাদের মোল্লা ও তাঁর সহযোগীরা তাঁকে ধরে জল্লাদখানা পাম্পহাউসে নিয়ে জবাই করে হত্যা করেন।
চতুর্থ অভিযোগে বলা হয়, একাত্তরের ২৫ নভেম্বর সকাল সাড়ে সাতটা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত কাদের মোল্লা ও ৬০-৭০ জন রাজাকার রাজধানীর কেরানীগঞ্জ থানার খানবাড়ি ও ঘটেরচর (শহীদনগর) এলাকায় যান। সেখানে দুজন নিরস্ত্র মুক্তিযোদ্ধা ওসমান গণি ও গোলাম মোস্তফাকে বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে দিনের আলোয় নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। কাদের মোল্লা ও তাঁর সহযোগীরা ভাওয়াল খানবাড়ি এবং ঘাটারচরে (শহীদনগর) হামলা চালিয়ে শতাধিক নিরস্ত্র গ্রামবাসীকে হত্যা করেন।
পঞ্চম অভিযোগ অনুযায়ী, ২৪ এপ্রিল পাকিস্তানি সেনাদের একটি হেলিকপ্টার মিরপুরের আলোকদি গ্রামের পূর্ব দিকে নামে। কাদের মোল্লা অর্ধশতাধিক অবাঙালি ও রাজাকার নিয়ে গ্রামের পশ্চিম দিক থেকে ঢোকেন এবং এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে থাকেন। ওই ঘটনায় ৩৪৪ জনের বেশি মারা যায়।
ষষ্ঠ ও শেষ অভিযোগে বলা হয়, একাত্তরের ২৬ মার্চ সন্ধ্যা ছয়টার দিকে কাদের মোল্লা ও তাঁর সহযোগী কয়েকজন অবাঙালি বিহারি ও পাকিস্তানি সেনা মিরপুরের ১২ নম্বর সেক্টরের ৫ নম্বর কালাপানি লেনের হযরত আলীর বাসায় যান। কাদের মোল্লার নির্দেশে হযরত আলীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। একই সঙ্গে তাঁর স্ত্রী আমিনা এবং দুই মেয়ে খাদিজা ও তাহমিনা, দুই বছরের ছেলে বাবুকে হত্যা করা হয়। একই ঘটনায় কাদের মোল্লার ১২ সহযোগী মিলে হযরতের ১১ বছরের মেয়েকে ধর্ষণ করে। হযরতের আরেক মেয়ে মোমেনা ওই সময় আত্মগোপন করে সেই ঘটনা প্রত্যক্ষ করেন।