This slideshow requires JavaScript.

এই বিষয়ে লেখা ঠিক আগের ব্লগটিতে আশংকা করেছিলাম “এসব কর্মকান্ড প্রতিহত করতে চাইলে জনগনের উপর আবার খড়গহস্ত হবে বর্তমানে শেখ হাসিনার তত্বাবধানে থাকা পেটোয়া বাহিনী!”

হ্যাঁ, তাই হয়েছে আজ। ফুলবাড়িতে স্থানীয়দের জনসভা বানচালে সরকার ১৪৪ ধারা দিয়েছে। আমি ধিক্কার জানাই।

এশিয়া এনার্জিকে আবার উন্মুক্ত খনি খননকাজে সহযোগিতা করার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের পূর্বে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার উচিত ছিল জনগনের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনাপূর্বক নিজের নীতি ও প্রতিজ্ঞার বিরুদ্ধে যাবার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করে তাদের আস্থায় নেয়া।

আজ ফুলবাড়িতে যা হচ্ছে তা অন্যায়, প্রতারনা।

ধন্যবাদ মিডিয়াকে ও ফেসবুকে-ব্লগে সক্রিয়দের।

লাল সালাম জানাই ময়দানের সাথীদের, যারা পুলিশের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে মিছিল-সমাবেশ করেছেন এবং আগামীকাল হরতাল ডেকেছেন।

ফুলবাড়িঃ শুধু প্রতিশ্রুতিভঙ্গ নয়, এটা লুটপাট

কয়লা নিয়ে হুড়োহুড়ি!

এশিয়া এনার্জির জরিপে সহায়তা করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠি

ফুলবাড়ী কয়লাখনি উন্নয়নে এশিয়া এনার্জির নতুন প্রস্তাব

GCM’s business update

Open-pit, Asia Energy (GCM plc) prioritised again for Phulbari mine!

Open pit is reality

এশিয়া এনার্জির অবৈধ ব্যবসার খবর মিডিয়ায় আসে না: আনু মুহাম্মদ

Government offered 30 percent of Phulbari coal mine stake by GCM

আগের লেখা থেকে ১:

উন্মুক্ত কয়লা খনি ও এশিয়া এনার্জিকে বাংলাদেশ থেকে তাড়ানোসহ ৬দফা দাবিতে ২০০৬-এর আগস্ট মাসজুড়ে আন্দোলনের এক পর্যায়ে ২৬ তারিখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গুলি চালায় আন্দোলনকারীদের উপর যাদের মধ্যে এলাকার ছেলে-মেয়ে-বুড়ো সবার পাশাপাশি সারা দেশ থেকে সমব্যাথীরাও ছিলেন। আমিন, সালেকিন ও তরিকুল প্রাণ হারালেন। তখনকার বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার সমঝোতায় আসতে রাজী হলো ৩০ তারিখে। রাজশাহীর মেয়র মিজানুর রহমান মিনুকে পাঠালেন খালেদা, চুক্তি হলো। কথা ছিল নিহতদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার পাশাপাশি উন্মুক্ত পদ্ধতিতে খনন না করা। সেই ৬ দফা চুক্তির মধ্যে আরো ছিল – এশিয়া এনার্জিকে দেশ থেকে বহিষ্কার, নিহতদের স্মরণে স্মৃতি সৌধ নির্মাণ, গুলিবর্ষণকারীদের শাস্তি দেওয়া, আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে দায়ের সব মামলা প্রত্যাহার।

সেপ্টেম্বরের ৪ তারিখে তখনকার বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা তার নির্বাচনপূর্ব প্রচারনার অংশ হিসেবে এবং ফুলবাড়ির আন্দোলনকে নিয়ে ভোটের রাজনীতি করার অভিপ্রায়ে সেখানে সরকারি কলেজ মাঠে ১৪ দলের সমাবেশে বক্তব্য রাখলেন, যা ছিল পুরোপুরি আন্দোলনকারীদের মত অনুযায়ী। প্রথম আলোর ৫ই সেপ্টেম্বরের পত্রিকা অনুযায়ী, তিনি বলেছিলেন, “জোট সরকার ফুলবাড়ি হত্যাকান্ডের ঘটনায় ফুলবাড়ির মানুষের সাথে করা চুক্তি বাস্তবায়ন না করলে এর পরিনাম ভয়াবহ হবে। আর এর দায়দায়িত্ব নিতে হবে জোট সরকারকে। আওয়ামী লীগসহ ১৪ দল ফুলবাড়ির জনগনের সাথে আছে।”

তিনি বলেন দেশের সম্পদ রক্ষা করতে গিয়ে ফুলবাড়িবাসী যে আত্মত্যাগ করেছে তা ইতিহাস হয়ে থাকবে। এ বীরত্বপূর্ণ আত্মত্যাগের জন্য তিনি ফুলবাড়িসহ সংশ্লিষ্ট চার উপজেলার নারী-পুরুষদের ধন্যবাদ জানান।

এমনকি তিনি বলেছিলেন ক্ষমতায় গেলে ফুলবাড়ি চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন করবেন!!!

কিন্তু বিধিবাম। ক্ষমতায় আসার এক বছরের মাথায় ২০১০ সালের ৭ই এপ্রিল জ্বালানি মন্ত্রনালয়ের এক সভায় তিনি বললেন উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা তোলার ব্যাপারে চিন্তা করতে। যদিও তিনি ফুলবাড়ির কথা বলেননি, বলেছেন বড়পুকুরিয়া খনিকেই (বর্তমানে ভূ-গর্ভস্থ পদ্ধতিতে কাজ চলছে) রুপান্তর করে ফেলা যায় কিনা তার সম্ভাব্যতা যাচাই করতে। উল্লেখ্য, এলাকা দুটি পাশাপাশি অবস্থিত। পাশাপাশি তিনি বলেছেন আগে ক্ষতিপূরণ দিয়ে স্থানীয়দের জমি অধিগ্রহন করতে হবে ও পরিবেশের কথা মাথায় রাখতে হবে। এর নানা দিক নিয়ে কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করেছেন।

তারপর থেকেই শুরু হলো সরকারের তোড়জোড়। পাশাপাশি যুক্তরাজ্যের শেয়ার মার্কেটে এখনও এই খনির কথা বলে টাকা কামিয়ে যাচ্ছে এশিয়া এনার্জির মাদার কোম্পানী জিসিএম। সম্প্রতি সরকারের তথাকথিত বিশেষজ্ঞ কমিটি জার্মানী ঘুরে এসে এবং ভারতের উন্মুক্ত কয়লা খনির উদাহরন দিয়ে জানালেন আমাদের ফুলবাড়ি ও বড়পুকুরিয়াতে এই পদ্ধতিই ব্যবহার করা উচিত। উইকিলিকসের মাধ্যমে জানা যায় যে, আমেরিকার প্রাক্তন রাষ্ট্রদুত মরিয়ার্টি ২০০৯ সালে এক বৈঠকে হাসিনার জ্বালানী উপদেষ্টা তৌফিক-ই-এলাহীকে চাপ দিয়েছিলেন এশিয়া এনার্জির প্রস্তাব মেনে নিতে এবং ইতিবাচক আশ্বাস পেয়েছিলেন।

আগের লেখা থেকে ২:

সবকিছু পরিকল্পনামাফিকই হচ্ছে; বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের মার্চ ৫ তারিখের খবরে জানা গেল, বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড (বিসিএমসিএল) এখন কয়লা খনির উত্তরাংশে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন করতে চায়। পেট্রোবাংলাকে ইতিমধ্যে এ বিষয়ে একটি প্রস্তাবও দিয়েছে খনিটির মূল অংশে বর্তমানে ভূ-গর্ভস্থ পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলনরত পেট্রোবাংলার এই কোম্পানিটি।

লাল ফিতায় আটকে থাকা খসড়া কয়লা নীতিতেও এমন একটি প্রস্তাব ছিল।

তার ২দিন আগে জানা গেল, বড়পুকুরিয়া খনিতে ১৬ই মার্চ থেকে এখন থেকে দ্বিতীয় স্তরের কয়লা উত্তোলন করা হবে নতুন পদ্ধতিতে। আর এতে উৎপাদনের গতি বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হবে বলে আশা করছেন বিসিএমসিএল কর্তৃপক্ষ।

এখন আর এশিয়া নাম শোনা না গেলেও, ফুলবাড়ি কয়লা খনি প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে জিসিএম রিসোর্সেস। এশিয়া এনার্জির পরিবর্তিত নাম জিসিএম। কয়লার অনুসন্ধান ও খনি উন্নয়ন করার জন্য এশিয়া এনার্জি এবং বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে চুক্তি সম্পাদিত রয়েছে।

এ সংক্রান্ত আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো ফেব্রুয়ারির ২৮ তারিখে জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা ফুলবাড়িতে উন্মুক্ত কয়লা খনির পরিকল্পনায় আশংকা প্রকাশ করেন। এই প্রকল্প শুরু না করতে তারা সরকারকে অনুরোধ জানায়। তাদের মতে এই প্রকল্প চালু হলে ফুলবাড়ি এলাকার প্রায় ৫০,০০০ থেকে ১,৩০,০০০ মানুষকে স্থানান্তর করতে হবে–মোট প্রায় ২,২০,০০০ মানুষের জীবন-জীবিকা-বাসস্থান পরিবর্তনে বাধ্য করবে। সেচপ্রকল্প, কুয়া ও নদীর পানি ক্রমশ শুকিয়ে যাওয়ার কারনে কৃষি ব্যবস্থা ধ্বংস হবে। ৩৬ বছর ধরে প্রায় ৬,০০০ হেক্টর জমিতে প্রায় ৫৭ কোটি ২০ লক্ষ টন কয়লা উত্তোলন করার কারনে প্রায় ১২,০০০ হেক্টর কৃষিজমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এছাড়া প্রায় ১,০০০ মাছের খামার আর ৫০,০০০ ফলের গাছ ধ্বংস হবে।

যদিও জিসিএম’এর দাবি খনির মেয়াদকালে (৩৫ বছরের বেশি) প্রায় ৪০,০০০ ব্যক্তিকে (যার বেশিরভাগ প্রথম দশ বছরে) স্থানান্তরের প্রয়োজন হবে। কিন্তু এই মেয়াদকাল (মাইন লাইফ) এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ২ বিলিয়ন ডলারের বেশী বিনিয়োগ ও প্রকল্প সময়কালে বাংলাদেশের ৭ বিলিয়ন ডলারের বেশী রাজস্ব ও অন্যান্য আয় হবে।আর সেটাকেই আমাদের সরকার গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করছে।

এদিকে ২২শে ফেব্রুয়ারি লন্ডন মাইনিং নেটওয়ার্ক ও ইন্টারন্যাশনাল একাউন্টেবিলিটি প্রোজেক্ট এর প্রতিবেদনেও (যা ইউকে পার্লামেন্টের একটি প্রকাশনাতে ছাপা হয়েছে ২২শে ফেব্রুয়ারি) প্রস্তাবিত ফুলবাড়ি প্রকল্পকে উদ্দেগের সাথে দেখা হয়েছে, বিশেষ করে খননকারী প্রতিষ্ঠানকে বাংলাদেশের মত একটি দরিদ্র দেশ নানা ধরনের আর্থিক মওকুফ করে জিসিএমকে যেভাবে লাভবান করে দিচ্ছে সেটা নিয়ে। তাছাড়া ১০০ ভাগ রপ্তানীর সুবিধা, মানব-বসতি ও পরিবেশের মারাত্মক কুপ্রভাব নিয়েও সেই প্রতবেদন বিস্তারিত আলোচনা করেছে।

এশিয়া এনার্জি ছাড়াও ভারতের টাটা গ্রুপও বড়পুকুরিয়া ও ফুলবাড়ি থেকে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা তোলার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিল ২০০৫ সালে।

সম্প্রতি এক মাসের ব্যবধানে কয়লা উত্তোলন নিয়ে দুরকম মন্তব্য করে একটা ধোঁয়াশা তৈরি করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। ১৪ই জানুয়ারি ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশনে এক অনুষ্ঠানে তিনি বললেন আমাদের যেসব কয়লা খনি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় অবস্থিত, সেখান থেকে কয়লা উত্তোলনে তার সরকারের কোন পরিকল্পনা নেই। ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য তিনি তা রেখে যেতে চান। সবাই বাহবা দিল তার সেই বাক্যে। কিন্তু ফেব্রুয়ারির ১৫ তারিখে সংসদে বললেন অন্য কথা—বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য নাকি কয়লা তুলতে হবে! এই খাতের ২০১০ সালের মহাপরিকল্পনা অনুযায়ি ১১,০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কয়লা দিয়ে উৎপাদন করতে হবে।

আবার একটা ভুল-বোঝাবুঝি। এত দ্রুত মত পরিবর্তনের কারনও তিনি জাতিকে পরিষ্কার করে বলেননি।

সম্প্রতি জমা হওয়া সরকারি বিশেষজ্ঞদের প্রতিবেদন থেকে নেয়াঃ

গত ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১১, সরকার বাংলাদেশের কয়লা খনি সমূহের ভূ-তাত্ত্বিক ও পরিবেশগত অবস্থা, কয়লা উত্তোলনের বিভিন্ন দিক এবং বাংলাদেশের নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে উন্মুক্ত খনির ঝুঁকি ও সম্ভাবনা ইত্যাদি বিষয়ে বিশ্লেষণ করে মতামত প্রদানের জন্য একটি কমিটি গঠন করে। ২০১২ সালের জানুয়ারী মাসে প্রস্তুত রিপোর্টের বিভিন্ন অধ্যায়ে বিশেষজ্ঞ বিশ্লেষণে বাংলাদেশে উন্মুক্ত খনির ভয়াবহ ঝুঁকি যথাযথভাবেই আলোচিত হয়েছে। কিন্তু বিস্ময়করভাবে উপসংহারে গিয়ে বিশ্লেষণের বিপরীতে গিয়ে উন্মুক্ত খনি ও বিদেশী কোম্পানির পক্ষেই সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, রিপোর্ট সরকারের কাছে জমা দেবার আগেই উন্মুক্ত খনি ও বিদেশী কোম্পানির পক্ষের সিদ্ধান্ত পত্রপত্রিকায় ব্যাপকভাবে প্রচার করা হয়েছে। আমরা তাই নিশ্চিত যে, যারা এই কমিটিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করতে চেয়েছিলেন তাদের চাপের মুখে রেখে কমিটির ভেতর ও বাইরে থেকে কোম্পানির লবিষ্টরা রিপোর্টটিকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করতে সবরকম কূটকৌশলের আশ্রয় নিয়েছে।

বিশেষজ্ঞ কমিটির রিপোর্টের ভেতরে উন্মুক্ত খনির বিপদ সম্পর্কে যা যা বলা হয়েছে তার কয়েকটি এখানে উল্লেখ করলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে। বলা হয়েছে: “বাংলাদেশের কয়লা মজুদের ক্ষেত্রে এটা ঠিক যে উন্মুক্ত খনি কয়লা উত্তোলনের হার অনেক বৃদ্ধি করে বিনিয়োগকারীদের জন্য আকর্ষণীয় হতে পারে, কিন্তু পরিবেশের বিপর্যয়ের সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক ও প্রতিবেশগত ক্ষতি বর্ধিত কয়লা উত্তোলনের থেকে প্রাপ্ত সুবিধার তুলনায় অনেক বেশি হতে পারে। যদিও বৈজ্ঞানিক যুক্তি তর্কে এটা বলা সম্ভব যে, স্ট্রীপ মাইনিংয়ে কয়েক বছর পরেই ভুমি আবার পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব, কিন্তু বাস্তবে মাটির উপরের স্তর সরিয়ে ফেলার পর জমির উর্বরতা পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা অসম্ভব হতে পারে।…উন্মুক্ত খনির ক্ষতি এতো বেশী যে তা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।” (পৃষ্টা ১৫)

ফুলবাড়ীর কয়লা প্রকল্পের মারাত্বক ঝুঁকি সম্পর্কে কয়েকটি পয়েন্ট উল্লেখ করা হয়েছে:
“১. পানি শূন্য করার প্রভাবের মাত্রা ও পরিমাণ পুরোটাই অনিশ্চিত।
২. পানিতে দূষণের মাত্রা পরিবেশগত ভয়াবহ বিপর্যয় আনবে।
৩. ভূগর্ভস্থ পানি তোলার ফলে কোথাও হস্তচালিত নলকূপ কাজ করবে না। তা ছাড়া পানি সরবরাহের যে নেটওয়ার্ক আছে তা দূষিত হবার কারণে মানবিক বিপর্যয় ভয়াবহ (Catastrophe) হবে।
৪. সমগ্র অববাহিকা জুড়ে ভূগর্ভস্থ ও ভূপরিস্থ পানি দীর্ঘ মেয়াদের দূষণের শিকার হবে।
৫. বিশাল আকারের বর্জ্য মজুদ বোমার মত অবস্থা তৈরী করবে।
৬. প্রায় দশ লক্ষ মানুষের পূনর্বাসন জটিলতা সামাজিক অস্থিরতা ও সংঘর্ষের উচ্চ মাত্রার ঝুঁকি তৈরী করবে” (পৃ: ৩০)
৭. “৩৮ বছর ধরে প্রতিদিন ৮০ কোটি লিটার ভূগর্ভস্থ পানি প্রত্যাহার করতে হবে” (পৃ: ৫২)

“উন্মুক্ত খনির খরচ কম কিন্তু পরিবেশের জন্য তা খুবই ক্ষতিকর। এতে অতিরিক্ত বর্জ্য (Over burdens) ফেলার জন্য বিশাল জায়গার প্রয়োজন হয়। হিসাব অনুযায়ী অতিরিক্ত বর্জ্য ও কয়লার অনুপাত হচ্ছে ২৫:১। অর্থাৎ ১ মে. টন কয়লা উত্তোলনের জন্য ২৫ মে. টন সরাতে হবে। এই ভূগর্ভস্থ দ্রব্য যেগুলো প্রধানত দূষিত, তা রাখতে হবে পাশ্ববর্তী কৃষি জমি জলাশয় ও নদীতীরে। এগুলো যে শুধুমাত্র আশেপাশের জলাশয়কে দূষিত করবে তাই নয়, তার নীচের দিকের সকল নদী, খাল ও জলাভ’মিকে ভয়াবহ মাত্রায় দূষিত করবে। …বৃষ্টির কারণে অনেক বর্জ্য পানিতে ধুয়ে যাবে এবং তা জমি, নদী, জলপ্রবাহ, নদীকে বিষাক্ত করবে।” (পৃ ৪৯)

রিপোর্টে ফুলবাড়ী কয়লা প্রকল্পের লাভক্ষতির হিসাব দেখানো হয়েছে এভাবে, “এশিয়া এনার্জি বিনিয়োগ করবে ৯৩০০ কোটি টাকা, কিন্তু লাভ করবে কমপক্ষে ১,৪২,১০০ কোটি টাকা। শুধু মাত্র কৃষি আবাদের ক্ষতিতে ৫০ বছরের ক্ষতি হবে ২৫,০০০ কোটি টাকা।” (পৃ: ৫০)

ভূগর্ভস্থ পদ্ধতি সম্পর্কে বলা হয়েছে:
“ভূগর্ভস্থূ খনি পদ্ধতিতে ভূমি ধ্বস একটা অনিবার্য সমস্যা। তবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলে এটা কমানো সম্ভব….অতীতে এ বিষয়ে খুবই ভুল প্রচারণা চালানো হয়েছে যে ভূগর্ভস্থ পদ্ধতিতে মাত্র ১০% কয়লা উত্তোলন করা সম্ভব। ৯০% কয়লা মাটিতেই পড়ে থাকবে। এটা খুবই ভুল তথ্য। ভূগর্ভস্থ পদ্ধতিরও বিভিন্ন দিক আছে। রুম ও পিলার পদ্ধতিতে ৫০% কয়লা উত্তোলন করা সম্ভব। যান্ত্রিক লং ওয়াল পদ্ধতিতে এটা ৭০% উঠতে পারে। ” (পৃ: ৪৩)

মালিকানা বিষয়ে:
“দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে রয়্যালটির ভিত্তিতে কয়লা উত্তোলনে বিদেশী ঠিকাদারকে অনুমতি দান যৌক্তিক নয়। খনিজ সম্পদ, তেল, গ্যাস ও কয়লার মালিক দেশের জনগণ। এসব ক্ষেত্রে রয়্যালটি গ্রহণ করলে বিদেশী বিনিয়োগকারীর কয়লা ও গ্যাসের মালিকানা অনুমোদিত হবে যা তারা রপ্তানী করবে। এটা সংবিধান বিরোধী।” (পৃ: ৪৬)

এতোসব ভয়াবহ ঝুঁকি ও ক্ষয়ক্ষতির কথা স্বীকার করবার পরও রিপোর্টের শেষে গিয়ে বড়পুকুরিয়ায় বিদেশি কোম্পানির মাধ্যমে উন্মুক্ত খনন করবার প্রস্তাব করা হয়েছে। বোঝাই যাচ্ছে, ভেতরের অংশ বিশেষজ্ঞ মতামত আর উপসংহার কোম্পানির।