আজ সকালে ঢাকায় কি কি ঘটতে পারে তার একটা ধারনাসূলভ ফিরিস্তি দাঁড় করানোর চেষ্টা করিঃ * রাস্তার দুপাশে অনেক ভাঙাচোরা দোকানপাট দেখা যাবে; * ভ্যান-ঠ্যালাগাড়ি বা কাঁধে নিয়ে হকাররা মালামাল সরাবে; * রাজনৈতিক-সামাজিক ও দাতব্য সংগঠনগুলোসহ ফুটপাত দখল করা সবাই তাদের ঘরগুলো সরিয়ে নিবে; * রাস্তাঘাটে-ফুটপাতে রাগী মুডে প্রচুর পুলিশ মোতায়েন থাকবে; * রাস্তায় গাড়ির জ্যাম ও ফুটপাতে মানুষের জ্যাম কম থাকবে।

আশংকার বিষয় হলো হকার ও ক্ষুদে দোকানীরা এই বজ্রাঘাতসূলভ হঠকারি সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারবে কিনা। পারার কথাও নয়। ২৪ ঘন্টা সময় খুব বেশী না। এভাবে সময় বেঁধে দিয়ে পুলিশের সাহায্যে ঢাকার সব হকারদের উচ্ছেদ করাটা নিন্দনীয়। পুনর্বাসন তো দূরে থাক, এদেরকে তো লাথি মেরে সরিয়ে দেয়া হবে। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাই। আবার আইন ব্যবহার করার রাস্তা ক্লিয়ার করতে বলা হয়েছে ‘অবৈধ দোকান’; আরে, ফুটপাতে কি কোন বৈধ দোকান আছে নাকি? জানতাম না তো!

চাপা উত্তেজনা দেখা যাবে সরকারি দলের অফিসগুলো সরানো নিয়ে। এদের নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্ধ থাকার আরেকটা বড় কারন হলো চা-নাস্তার টাকা আসে যেসব হকার ও দোকানপাট থেকে সেই ইনকাম সোর্সটা নষ্ট হয়ে যাবে, জীবনে ছন্দপতন ঘটবে।

এই মহাজাগতিক (!)-আদিভৌতিক (!)-স্বৈরাচারি সিদ্ধান্তটা এসেছে গতকাল দুপুরে এলজিআরডি ভবনে ঘটে যাওয়া এক গুরুত্বপূর্ণ সভা থেকে, যেখানে প্রতিমন্ত্রী নানক, সচিব, ডিসিসি’র কর্মকর্তারা, ডিএমপি কমিশনার ও ট্রাফিক পুলিশের সিনিয়র কর্মকর্তারা। তারা মনে করেন এটাই এখন ঢাকা শহরে শান্তিমতো গাড়ি চালানো ও হাঁটার সুবন্দোবস্ত করার একমাত্র কার্যকরী পথ, যার মাধ্যমে অল্প সময়ের মধ্যেই ঢাকার মত একটা শহরে ম্যাজিক দেখাতে পারে সরকার।

আরও কিছু ঘটনা ঘটতে পারে। যেমন * গুলিস্তান, ফার্মগেট, মহাখালীসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় রাস্তা অবরোধ, অতিরিক্ত জ্যাম দেখেই বুঝা যাবে মনে হয়; * কিছু কিছু রাস্তা ভাংচুর ও পুলিশের সাথে ধাওয়া-ধাওয়ির কারনে বন্ধ থাকবে; * এ ধরনের প্রতিবাদী আচরনে সহযোগিতা থাকবে যারা প্রতিদিন চাঁদার বিনিময়ে এদের ব্যবসা করতে দেয়।

আরো কিছু সুখকর ঘটনা ঘটবে, যেমন ব্যানার-তোরন ইত্যাদি থাকবেনা রাস্তায়, কেউ বা তখনো খুলে নিচ্ছে ইত্যাদি ইত্যাদি।

তবে, শহরে চিরচেনা একটা রূপও চোখে পড়বে। রাস্তায় পাশে সারি সারি গাড়ি পার্ক করা থাকবে যথারীতি।

বিভিন্ন রাস্তায়, অফিস-মার্কেটের সামনে, চিপা গলিতে যখন-তখন রাখা এইসব গাড়িগুলোকে কি করা হবে তা জানা যায়নি। সিগন্যাল বাতির সংস্কার ও আবার লেন মানতে বাধ্য করার বিষয়গুলোও আসেনি। পুরনো-ভাঙাচোরা লেগুনা-বাসগুলোর কি করা হবে তাও বলেনি এই সভা (বলেনি যোগাযোগ মন্ত্রীর সাম্প্রতিক সভা যেখানে তিনি ৩মাস সময় দিয়েছেন সব পুরনো বাসের বাইরের দিকটা নতুন করে রাঙাতে!)।

এদিকে, বাল-বাচ্চাসহ এদের ঘাড় ধরে ঢাকার বাইরে পাঠানো হবে কিনা; বা মামলা দিয়ে বিক্ষোভকারীদের জেলে পুরা হবে কিনা; অথবা আশ্চর্যজনকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হকার-দোকানদারদের হাতে টাকা ধরিয়ে দেয়া হবে কিনা; তাদের পেশা পরিবর্তন বা শহরের বাইরে পাঠানোর বিষয়ে কিছু করা হবে কিনা এসব অপ্রয়োজনীয় (!!!) বিষয়ের কি কূল-কিনারা হবে তা জানা যায়নি।

দুপুর ১২টার ডেটলাইনের পরে রাজামশাইদের মাথায় নতুন কি আসবে তা অনুমান করতে চাইছি না। এরা জাহান্নামে যাক।