সম্প্রতি ঘটে যাওয়া সাংবাদিকদের উপর পুলিশের অমানবিক আচরনে দেশে-বিদেশে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। বিশেষ করে সাংবাদিক নির্যাতন ও তাদের উপর সন্ত্রাসী আক্রমনের ঘটনাগুলোকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে সরকার মানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও তার ডেপুটি পার পেয়ে যেতে চাচ্ছেন। তারা বলছেন এসব ঘটনায় তদন্ত হয় এবং শাস্তিও দেয়া হয় দায়িদের।

আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারন সম্পাদক হানিফ গতকাল বললেন কিছু পুলিশকে ব্যবহার করে নাকি সরকারের ইমেজ নষ্ট করা হচ্ছে। তার কদিন আগে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নাসিম বললেন পুলিশের ভেতরে থাকা বিএনপি-জামাতের লোকজন নাকি এসব করে বেড়াচ্ছে। কি হাস্যকর ও লজ্জাজনক যুক্তি! এসব ঘটনায় জড়িতরা যে সরকার দলের সমর্থক তা ইতিমধ্যেই সংবাদপত্রে প্রকাশ হয়েছে।

তবে পুলিশ বা কোন গোয়েন্দা সংস্থা এখন পর্যন্ত কোন ক্লু খুঁজে পেয়েছে বলে জানা যায়নি!

আর বিরোধীদলের প্রতিবাদ সভা-মিছিলের উপর পুলিশি হামলা ও তাদের জেলে ঢুকানোর বিষয়টিকে প্রধানমন্ত্রী প্রতিশোধ হিসেবে দেখছেন! “তারাও তো ২০০১ সালের নির্বাচনের উপর আমাদের নেতা-কর্মীদের উপর হামলা করেছে, নির্যাতন করেছে,” এমন কথাই বলেন তিনি দলীয় এক সভায়।

কিন্তু পাশাপাশি আইনজীবী-শিক্ষকদের উপর হামলা এবং যেকোন ধরনের প্রতিবাদী ভূমিকায় নামা সংগঠনের উপর হামলা ও নির্যাতনের ঘটনা এবং থানায় জিডি বা মামলা করতে গিয়ে সাধারন মানুষের হয়রানি নিয়ে এখন পর্যন্ত সরকারি মহল থেকে কোন বক্তব্য পাওয়া যায় নি। তাছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাসীদের দ্বারা জন-বিরোধী কর্মকান্ড সংঠনের সময়ে পুলিশের নীরব ভূমিকার কোন জবাবিদিহিতা নাই।

এক কথায় এটা পরিষ্কার যে, পুলিশ একটি দাস-প্রতীম দল যার কাজ সরকার ও তার দলের আদেশ-নিষেধ মান্য করে চলা। একই কথা প্রযোজ্য র্যাব, বিজিবি, সেনাবাহিনী ও সকল গোয়েন্দা সংস্থার ক্ষেত্রেও।

সেই ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমল থেকেই এখন নাগাদ পুলিশের এহেন আচরনের কোন দৃশ্যমান পরিবর্তন দেখা যায়নি। এর কারন বোধকরি এই যে এদের এভাবেই দেখতে চায় সকল সরকার, নিজেদের বাঁচাতে। কিন্তু যাদের টাকায় পুলিশের বেতন দেয়া হয়, সেই জনগনকে ভূগোল বুঝাতে বলা হয় পুলিশ জনগনের সেবক বা পুলিশ জনগনের বন্ধু।

আবার যারা পুলিশের চাকরিতে যোগ দিচ্ছে তারাও যেভাবে পুলিশকে দেখেছে ঠিক সেরকমভাবেই চালিয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া মাথার উপরে যারা আছে তাদের আচরনের বিরুদ্ধে যাবার সাহস নিয়ে তো এরা এই “লোভনীয়” চাকরিতে যোগ দেয়নি। তাই এই বাহিনীর আচরনগত পরিবর্তন এখনো অব্দি লক্ষনীয় নয়।

এখন পুলিশ আইন ও তাদের প্রশিক্ষন কার্যক্রমে পরিবর্তন আনলে হয়তো কয়েকবছর পরে কিছুটা পরিবর্তন হতেও পারে, তবে কোন সরকারই পুলিশকে (অপ)ব্যবহারের সুযোগটা হাতছাড়া করতে চাইছেনা। বরং নিজ নিজ আমলে নিজের দলের সমর্থকদের পুলিশ বাহিনীতে সহজ শর্তে নিয়োগ এবং পদোন্নতি দিচ্ছে। ফলে এই কুচক্র থেকে বের হবার কোন পথই দেখা যাচ্ছেনা।

সাংবাদিক ও পুলিশের সম্পর্ক নস্যা করার ষড়যন্ত্র চলছে : সাহারা খাতুন

ঢাকা, ১ জুন (বাসস) : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এডভোকেট সাহারা খাতুন বলেছেন, সাংবাদিক ও পুলিশের মধ্যকার সৌহার্দ্যময় পরিবেশ নষ্ট করার জন্য ষড়যন্ত্র কাজ করছে। এ ব্যাপারে আমরা সজাগ রয়েছি।

মন্ত্রী শুক্রবার সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) কার্যালয়ে ‘মিট দ্য রিপোর্টার্স’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন। ডিআরইউ সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ডিআরইউ’র সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন বলেন, ‘পুলিশ ও সাংবাদিক সমাজের মধ্যকার সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কে অবনতি ঘটানোর যেকোন প্রচেষ্টা উভয়পক্ষের মধ্যে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নিরসন করা উচিত।’

মন্ত্রী বলেন, পুলিশ বাহিনীর কোন সদস্য যদি কোন ভুল করে অথবা অপরাধ করে তাদের ছাড় দেয়া হবে না।

তিনি বলেন, বিগত কয়েকদিন আগে পুলিশ ও সাংবাদিক সমাজের মধ্যে যে ঘটনার সৃষ্টি হয়েছে তা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এসব ঘটনার সাথে জড়িতদের প্রত্যাহার করা হয়েছে। প্রতিটি ঘটনা তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তের পর দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

তিনি বলেন, বর্তমান সরকার গণতান্ত্রিক সরকার। জনগণের সরকার। যদি কাজ করতে গিয়ে আমরা ভুল-ত্র“টি করে থাকি তবে অবশ্যই মিডিয়ার কাছ থেকে গঠনমূলক সমালোচনা আশা করি। যাতে করে আমরা আমাদের কাজের ভুল সংশোধন করার সুযোগ পাই। মিডিয়ার কাছে সহযোগিতা ও পরামর্শ প্রত্যাশা করি।

তিনি বলেন, পুলিশ বাহিনীতে ১ লাখ ৪১ হাজার সদস্য। এদের বেশিরভাগ সদস্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ হয়তো সমানভাবে কাজ করছে না। তাদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ পেলে সঙ্গে সঙ্গে তদন্ত করে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।

তিনি বলেন, বিগত সরকারগুলোর শাসনামলে সারাদেশে সাংবাদিক হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। নির্যাতন ও হত্যার মামলাগুলোর অধিকতর তদন্ত করা হবে। এক্ষেত্রে তথ্য দিয়ে সাংবাদিকরা সহযোগিতা করবেন বলে তিনি প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।

মন্ত্রী বিগত সাড়ে ৩ বছরে বর্তমান সরকারের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে গৃহীত পদক্ষেপসমূহ তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর জঙ্গি দমনে, সন্ত্রাস দমনে, চাঁদাবাজি বন্ধে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, বিডিআর বিদ্রোহ ও হত্যাকাণ্ডের মামলা তদন্তে কাজ করছে। কোন কোন মামলার বিচার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারে বিশেষ অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

সরকার আইন সংশোধন করে ইভটিজিং প্রতিরোধে ভ্রাম্যমান আদালত মাঠে নামিয়েছে, যা সারাদেশে প্রশংসিত হয়েছে।

অনেক সময় পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে সাংবাদিকরা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন একথা উল্লেখ করে মন্ত্রী সেজন্য দুঃখ প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, সাংবাদিক নির্যাতনের প্রতিটি ঘটনার তদন্ত হচ্ছে। তাৎক্ষণিকভাবে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, সরকার পুলিশ বাহিনীকে জনবান্ধব বাহিনীতে পরিণত করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে।

মন্ত্রী বলেন, যেকোন অপহরণ, হত্যা, গুমের ঘটনায় সঙ্গে সঙ্গে মামলা হলে তা তদন্ত করা হয়। তদন্তের পর আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহতের প্রতিটি ঘটনা বিচার বিভাগীয় তদন্ত হয়ে থাকে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যখন সন্ত্রাসীদের ধরতে যায় তখন সন্ত্রাসীরা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করে। শুধুমাত্র আত্মরক্ষার্থে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা প্রতিউত্তরে গুলিবর্ষণ করে থাকে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, সরকার সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতন চালাতে পুলিশ বা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি কোন নির্দেশ প্রদান করেনি।

রাজধানীর ধানমন্ডি থানার ওসি মনিরুজ্জামানকে প্রত্যাহার করার বিষয়ে তিনি বলেন, বিষয়টি আমি দেখবো।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, সাগর-রুনি ও ইলিয়াস আলী মামলা বর্তমানে তদন্তাধীন রয়েছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোন মন্তব্য করা যাবে না।

মন্ত্রী বলেন, ‘আমি সাগর-রুনির হত্যার পর তাদের বাসায় পুলিশকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আসামীদের গ্রেফতার করতে বলেছিলাম। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করা হবে এমন কোন কথা বলিনি।’

এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহতদের পরিবারের সদস্যরা যেকোন সময় আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারেন। আমি বিষয়টি দেখবো।’